দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান কোলেস্টেরল। কিন্তু রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বা লেভেল অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ধমনির প্রাচীর পুরু হয়ে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান খাবার ও যকৃৎ থেকেই শরীরে কোলেস্টেরলের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ হয়। যকৃতে আগে থেকেই কোলেস্টেরল জমা থাকে। শরীর তার প্রয়োজনে এই কোলেস্টেরল যকৃৎ থেকে নেয়। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো দুই ধরনের হয়—নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হলো—ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়ডিজম এবং খাবার। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম না করা, উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড চর্বিজাতীয় খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে রয়েছে—বংশগত কারণে অনেকের শরীরে লিপিড ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার কারণেও রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর থেকে মানবদেহে কোলেস্টেরল লেভেল বাড়া শুরু করে। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষের দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মহিলাদের তুলনায় কম থাকে। তরুণ বয়সে নারীদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ ছেলেদের তুলনায় বেশি থাকে। রকমফের এক ধরনের প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে পরিভ্রমণ করে কোলেস্টেরল। এই প্রোটিন সংযুক্ত কোলেস্টেরলকে বলে ‘লিপোপ্রোটিন’। লিপোপ্রোটিনগুলোয় বিভিন্ন ঘনত্বের প্রোটিন থাকে—উচ্চ ঘনত্ব, নিম্ন ঘনত্ব, নিম্নতর ঘনত্ব। কোলেস্টেরলের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এলডিএল : এলডিএল বা লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনকে বলা হয় খারাপ কোলেস্টেরল। এজাতীয় কোলেস্টেরল সহজেই মানবদেহের ধমনিগাত্রে জমা হতে পারে। এতে প্রোটিন কম ও ফ্যাট বেশি থাকে। কারো রক্তে এই ধরনের কোলেস্টেরল যত কম থাকবে, অ্যাথেরোসকেরেসিস, হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য জটিলতা থেকে তিনি তত বেশি রক্ষা পাবেন। এইচডিএল : এইচডিএল বা হাইডেনসিটি লিপোপ্রোটিনকে কখনো বলা হয় ভালো কোলেস্টেরল। কারণ এজাতীয় কোলেস্টেরল ধমনিগাত্রে কোলেস্টেরলকে জমাট বাঁধতে দেয় না। এর বেশির ভাগ উপাদানই হলো প্রোটিন, যার সঙ্গে খুব অল্প পরিমাণ চর্বি মিশ্রিত থাকে। এইচডিএল রক্ত থেকে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সহায়তা করে। এটি রক্তের মধ্য থেকে খারাপ কোলেস্টেরলকে যকৃতে নিয়ে জড়ো করে এবং যকৃৎ এই কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করার কাজে সহযোগিতা করে। ট্রাইগ্লিসারাইড : ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) হলো এমন একটি কোলেস্টেরল, যাতে খুব অল্প পরিমাণ লিপোপ্রোটিন থাকে। সাধারণত রক্তে সামান্যই ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে। বরং চর্বিকোষে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি মাত্রায় জমা থাকে। রক্তে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক প্রভৃতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। পরিমাণ নির্ণয় রক্তের কোলেস্টেরল নির্ণয় করার জন্য দুই ধরনের পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্ট বা খালি পেটে কোলেস্টেরল টেস্ট এবং নন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্ট। ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্টের আরেক নাম লিপিড প্রোফাইল। এই পরীক্ষায় এইচডিএল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা হয়। আর নন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল পরীক্ষায় সামগ্রিক কোলেস্টেরল লেভেল ও এইচডিএল লেভেল বা ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ দেখা হয়। সর্বমোট কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৭০ মিলিগ্রামের নিচে, এলডিএল প্রতি ডেসিলিটারে ১০০ মিলিগ্রামের নিচে আর ট্রাইগ্লিসারাইড প্রতি ডেসিলিটারে ১৫০ মিলিগ্রামের নিচে থাকে। ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের মাত্রা ডেসিলিটারে ৪০ মিলিগ্রামের ওপরে রাখা ভালো। উপসর্গ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ নেই। রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে এটি সহজে বোঝাও যায় না। কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরলের খারাপ প্রভাবজনিত কারণে অ্যাথেক্সেকেরোসিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক, পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ প্রভৃতি কঠিন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে ২৫ বছরের পর অন্তত পাঁচ বছরে একবার এবং ৪০ বছরের পর বছরে অন্তত একবার রক্ত পরীক্ষা কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা উচিৎ। তা না হলে এমনও হতে পারে, হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর পরীক্ষা করে বোঝা যাবে যে কারো রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে। কেননা, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা থাকলে আগে থেকেই সম্ভাব্য বিপদ এড়ানো যায়।
Post Top Ad
Sunday, January 28, 2018
অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.