আল্লাহ তাআলা মানব জাতীকে অতীব সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। চোখ, কান ও অন্তর দ্বারা মানবজাতীকে সৌন্দর্য মন্ডিত করেছেন। আর ক্বিয়ামতের দিন মানব জাতির প্রত্যেককে আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজির হতে হবে এবং জিজ্ঞাসার সম্মূখীন হতে হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে স্বীয় মাখলুকের মধ্যে চিন্তা-ফিকির করার যে নির্দেশ মানুষকে দিয়েছেন সে অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর মাখলুক সম্পর্কে চিন্তা- ফিকির করে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ব, তার সৌন্দর্য মন্ডিত কারীগরি ও নিঁখুত আবিস্কারের পরিপূর্ণতা প্রত্যক্ষ করবে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের নিজদের মধ্যেও। তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না?” (জারিয়াত: ২১) আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে কান ও চোখ হল, মানুষের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব পূর্ণ অঙ্গ ও আল্লাহর নেয়ামতসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তাআলা তার মহা গ্রন্থ আল-কুরআনে বলেন, আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, আমি তাকে পরীক্ষা করব, ফলে আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।” এ আয়াতটিতে গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করলে, দেখতে পাবে কানকে চোখের পূর্বে উল্লেখ করার বিশেষ হিকমত ও প্রজ্ঞাময় অর্থাবলী। অর্থাৎ, কানই হল আল্লাহর তাআলার সর্বাধিক গুরুত্ব পূর্ণ নেয়ামত যদ্বারা মানুষ আল্লাহর দ্বীনকে আয়ত্ব করতে পারে এবং তার শরীয়ত ও বিধানাবলী বুঝতে পারে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের উনিশটি স্থানে কান ও চোখের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সতেরটি স্থানে কানকে চোখের পূর্বে উল্লেখ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা পদত্ত যত নেয়ামত আছে তার মধ্যে কর্ণই হল, আল্লাহর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মহান নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা তার কালামে কর্ণকে চক্ষুর পূর্বে উল্লেখ করার হিকমত প্রসঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের কর্ণ চক্ষুর আগেই পূর্ণতা লাভ করে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কর্ণকে চক্ষুর পূর্বে আলোচনায় নিয়ে আসেন। এছাড়াও সাধারণত একজন মানুষ কানের মাধ্যমেই শরীয়তের বিধানাবলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং তার জ্ঞান মানুষের অন্তরে আল্লাহর বিধান ও শরিয়ত কর্ণের মাধ্যমেই স্থান করে নেয় একজন অন্ধ লোক তার দ্বীনের বিষয়ে সর্বাধিক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সে তার দুনিয়ার বিষয়ে সর্বাধিক অধিক ক্ষতিগ্রস্থ এবং সে ক্বিয়ামতের দিন অঙ্গহীণ ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের থেকে পরিণতিতে সবচেয়ে উত্তম লোক। পক্ষান্তরে বধির তার দুনিয়া বিষয়ে তাদের উভয়ের থেকে কম ক্ষতিগস্থ এবং দ্বীনের বিষয়ে তাদের উভয়ের তুলনায় কম উপকৃত। কারণ, কান দ্বারা মানুষ শরীয়তকে বুঝে এবং সে মুকাল্লাফ ও আল্লাহর আদেশ পালনের দয়িত্ব প্রাপ্ত হন। এ কারণেই কান আল্লাহর মানব সৃষ্টির প্রসংশিত স্থানেই তার স্থান রাখা হয়েছে। মানুষকে সন্দর সুরের অধিকারী করেছেন এবং কান দিয়েছেন যাতে সুর থেকে সে আনন্দ ও উল্লাস উপভোগ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে এরশাদ করেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, ফেরেশতাদেরকে বাণীবাহকরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।” (সূরা ফাতির: ১) আল্লামা ইবনে জারীর আত্তাবারী রহ. আল্লাহ তাআলার বাণী: এর তাফসীরে বলেন এখানে উদ্দেশ্য হল, সুন্দর আওয়াজ, যদ্বারা একজন মানুষ আনন্দ উপভোগ করে। আল্লাহ তাআলা ভালো কথা ও সুন্দর উক্তি শ্রুতিমধুর হওয়াতে তার প্রসংশা করেছেন। আর শোনা ছাড়াতো কোন কথার প্রসংশা করা যায় না। তাই আল্লাহর সুন্দর ও শ্রুতি মধুর আওয়াজের প্রশংসা করেছেন এবং কর্কশ ও বিরক্তকর আওয়াজের নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তাআলা গাধার আওয়াজের নিন্দা জানিয়ে বলেন, আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ’। (সূরা লুকমান: ১৯) এতে প্রতীয়মান হয় যে, কতক এমন সুন্দর আওয়াজ আছে, যা শোনে কান আগ্রহী ও আনন্দ পায়, আর এধরনের আওয়াজ জান্নাতীদের নেয়ামতের অর্ন্তভূক্ত। যেমন আল্লাহ তআলা বলেন, “অতএব যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে পরিতুষ্ট করা হবে।” এ আয়াতের তাফসিরে বর্ণিত, তা হল, শ্রবণ। আল্লামা ইবনে জারির আওজায়ী হতে এবং তিনি ইয়াহয়া ইবনে কাসীর হতে বর্ণনা করেন তা হল, শ্রবণ। এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, মানুষের স্বভাব হল, সুন্দর আওয়াজ ও সূর দ্বারা উপভোগ করা। তাই দেখা যায় একজন ছোট বাচ্চা যে কিছুই বোঝে না সেও সূর শোনে অভিভুত হয় এবং আনন্দ পায়। বিষয়টি শুধু আদম সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং চতুষ্পদ জন্তুও যখন সে দেখতে পায় তার উপর আরোহী লোকটির সূর সুন্দর হয়, তখন সে খুব দ্রুত দৌড়তে থাকে। এ কারণে আল্লামা ইবনে উলাইয়া বলেন, আমি একদিন ইমাম শাফেয়ীর সাথে হাঁটতে ছিলাম তখন আমরা একটি আওয়াজ শোনে তার প্রতি আকৃষ্ট হলাম তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমাকে কি আওয়াজ অভিভুত করছে? বললাম না তিনি বললেন, কেন! সুন্দর। একই অর্থে সফরে তারা মক্কার পথে যে কবিতা-গান আবৃতি করত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতদের কুরআনকে মধুর কন্ঠে তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,যে কুরআনকে সূর দিয়ে তিলাওয়াত করে না সে আমার উম্মতের অন্তভূর্ক্ত নয়।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা কোন নবীকে সূর ও উচ্চ আওয়াজ করার অনুমতি দেননি যেমনটি অনুমতি দিয়েছেন কুরআন তিলাওয়াত বিষয়ে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, “তোমরা তোমাদের সুন্দর কন্ঠ দ্বারা কুরআনের তিলাওয়াতকে সৌন্দর্য মন্ডিত কর।”এ কারণে বিজ্ঞ আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কুরআনকে সূর দিয়ে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। আবার কারো কারো মতে কুরআনকে সূর দিয়ে তিলাওয়াত করা ওয়াজিব। কারণ, রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিষ্কার বলেছেন- “তোমরা তোমাদের সুন্দর আওয়াজের মাধ্যমে কুরআনকে সৌন্দর্য মণ্ডিত কর।”
Post Top Ad
Wednesday, January 17, 2018
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে গানের বিধান
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.