সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমযান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ (فرض ফ়ার্দ্ব্) বা অবশ্য পালনীয়। রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে দিন। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। যেহেতু এই আমলটি দিনের শুরু থেকে শেষাংশ পর্যন্ত পালন করা হয় তাই একে রোজা বলা হয়। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর বান্দাদের জন্য রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। বান্দা তা সাগ্রহে পালন করেন। যেকোনো কারণে সময়মতো রোজা রাখতে না পারলে তা কাজা আদায় করতে হয় এবং রোজা রেখে কোনো ওজর বা অসুবিধার কারণে ভেঙে ফেললে তা-ও পরে কাজা আদায় করতে হয়। রমজান মাসে অসুস্থতার কারণে যারা রোজা রাখতে পারেননি বা নানা সংগত কারণে রোজা ছেড়ে দিয়েছেন কিংবা শরিয়ত সম্মত সফরে থাকায় তার পক্ষে রোজা না রাখার অনুমতি ছিল, এমন ব্যক্তিদের জন্য এখন ইসলামের বিধান কী? মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে অন্য সময়ে তার সে সংখ্যা পূরণ করে নিবে। আর এটি যদি তাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো সত্কর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর। বস্তুত যদি তোমরা রোজা রাখ তাহলে তোমাদের জন্য তা বিশেষ কল্যাণকর যদি তোমরা তা বুঝ’। (সূরা বাকারা-১৮৪)। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কিন্তু কখনো যদি রোজা রেখে কোনোরূপ ধোঁকায় বা তাড়নায় বিপথগামী হয়ে বিনা ওজরে তা ভঙ্গ করা হয়, তখন আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত নাখোশ হন। এর জন্য কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি আর কাফফারা হলো ষাটটি। এরূপ ওজর ছাড়া যে কয়টা রোজা রেখে ভাঙবে, প্রতিটির পরিবর্তে একটি করে রোজা কাজা এবং একই রমজান মাসের জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হবে একটি কাফফারা। অর্থাৎ একটি রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙা হলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা হবে একষট্টিটি রোজা, দুটি ভাঙলে হবে বাষট্টিটি রোজা, তিনটি ভাঙলে হবে তেষট্টিটি রোজা। অনুরূপ ত্রিশটি ভাঙলে হবে নব্বইটি রোজা। কাফফারা তিন প্রকারে আদায় করা যায়। প্রথমত, একটি গোলাম আজাদ করা বা দাসমুক্ত করা; দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিকভাবে ষাটটি রোজা পালন করা। কাফফারার রোজার মাঝে বিরতি হলে বা ভাঙলে আরেকটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, ষাটজন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে আহার করানো বা আপ্যায়ন করা। সাধারণ অসুস্থতায় যদি সুস্থ হয়ে রোজা কাজা আদায় করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করতে হবে। আর যদি এমন অসুস্থতা হয় যা সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো সম্ভাবনা না থাকে বা কম থাকে অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম হন, তাহলে প্রতি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। জাকাত-ফিতরা যাদের দেওয়া যায়, ফিদইয়া তাদের দিতে হয়। ফিদইয়া এককালীন বা একসঙ্গেও আদায় করা যায়। একজনের ফিদইয়া অনেককে দেওয়া যায়, আবার অনেকের ফিদইয়া একজনকেও দেওয়া যায়। অনুরূপ এক দিনের ফিদইয়া একাধিক জনকে দেওয়া যায়, একাধিক দিনের ফিদইয়া একজনকে দেওয়া যায়। যাকে ফিদইয়া দেওয়া হবে, তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়। যেমন নাবালেগ মিসকিন, অসহায় অসুস্থ বা অতিবৃদ্ধ, যারা নিজেরাই রোজা পালনে অক্ষম, তাদেরও জাকাত, ফিতরা ও সদকার মতো ফিদইয়া প্রদান করা যাবে। ফিদইয়া প্রদানের পর সুস্থ হলে এবং রোজা রাখতে সক্ষম হলে পুনরায় রোজা কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া রশিদিয়া)। নাবালেগ ছোট্ট শিশুরা নিজেদের আগ্রহে ও বড়দের উৎসাহে রোজা রাখে। যদিও তাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়। এমতাবস্থায় তারা যদি রোজা রেখে কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনোভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাদের এই রোজার কাজা বা কাফফারা কোনোটিই লাগবে না। তারপরও যদি তারা বড়দের সঙ্গে কাজা রোজা রাখতে শুরু করে এবং তা আবার ভেঙে ফেলে তারও কাজা লাগবে না। (হিদায়া) ফিদইয়া ও কাফফারা দেওয়া যাবে যাঁরা জাকাত ও ফিতরা তথা ফরজ ও ওয়াজিব সদকা গ্রহণ করতে পারেন। যথা ‘ফকির, মিসকিন, সদকা কর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য।’ (সুরা-৯ [১১৩] তাওবাহ (মাদানি), রুকু: ৮/১৪, আয়াত: ৬০, পারা: ওয়ালামু-১০, পৃষ্ঠা ১৯৭/১৫)। বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফে সহিহ রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে: একদা রমজানে এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছি, আমি রোজা পালন অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি একজন দাসকে মুক্ত করে দাও। সে বলল, এমন সক্ষমতা আমার নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তবে এর বদলে দুই মাস (বা ৬০ দিন) রোজা রাখো। লোকটি বলল, এমন শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। তখন তিনি (সা.) বললেন, তবে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এ রকম আর্থিক সক্ষমতাও তো আমার নেই। তখন তিনি (সা.) তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন। এর কিছুক্ষণ পর কোনো একজন সাহাবি রাসুল (সা.)-কে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই লোকটিকে ডেকে বললেন, এগুলো নিয়ে গিয়ে গরিবদের মধ্যে সদকাহ করে দাও। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্র এলাকায় আমার মতো গরিব আর কে আছে? এ কথা শুনে রাসুলে করিম (সা.) স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হাসলেন। তিনি (সা.) বললেন, ‘আচ্ছা, তবে খেজুরগুলো তুমিই তোমার পরিবার নিয়ে খাও।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর: ১৩৩৭, মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১১১১)
Post Top Ad
Monday, January 22, 2018
রোজার কাজা, কাফফারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.