
ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় লিগগুলোর ভেতর উল্লেখ্য হলো : প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা, বুন্দেসলিগা, লিগ ওয়ান এবং সিরি-আ। এসব লিগ প্রতিযোগিতায় অর্ধেক মৌসুম প্রায় শেষের পথে। যখন কোনো লিগের প্রায় অর্ধেক ম্যাচ শেষ হয়ে যায়, তখন অনেকটাই ধারণা করা যায়, কে পরতে যাচ্ছে শিরোপা মুকুট, অথবা সেরা পাঁচে থাকবে কোন দলগুলো। আজকের এ ফিচারে তুলে ধরা হবে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ভেতর কোন দলগুলো ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে নতুন মৌসুমে দারুণ ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রিমিয়ার লিগ : লিভারপুল
প্রিমিয়ার লিগে অপরাজিত থেকে লিগ শিরোপার কাছে খুবই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলো ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল। কিন্তু টটেনহাম হটস্পারের কাছে ০-২ গোলে হেরে অপরাজিত থাকার গৌরব হারিয়ে ফেলে সিটিজেনরা। কিন্তু লিভারপুল যেন এ মৌসুমে একদমই ভাবলেশহীন, ১৭ ম্যাচের মধ্যে এখনও কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। কিন্তু গত মৌসুমে এমন সময়ে তাদের অবস্থা কেমন ছিল? ওয়েম্বলিতে ৪-১ গোলে হেরে লিভারপুল নিজেদেরকে আবিষ্কার করেছিলো তালিকার নবম স্থানে; ওয়াটফোর্ড, বার্নলি ও নিউক্যাসল ইউনাইটেডেরও নিচে।

সম্প্রতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারানোর ম্যাচে; Image Credit: Mirror
গত মৌসুমের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে এবং অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রাখার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে তাদের রক্ষণভাগ। ভার্জিল ভ্যান ডাইকের দেয়াল পার করে অ্যালিসনকে টপকে গোল করাটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠছে এবার প্রত্যেকটি দলের জন্যই। বড় ধরণের অর্থ খরচ করে কেন ক্লপ এ দু'জনকে কিনতে বাধ্য হয়েছেন, তা বর্তমানে পরিষ্কার। কারণ, ১৭ ম্যাচের ভেতর ১০টিতেই ক্লিনশীট রেখেছেন অ্যালিসন। বাকি ৭ ম্যাচে লিভারপুল রক্ষণ হজম করেছে মাত্র ৭ গোল। আর প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর কাজটা গত মৌসুমের মতোই বজায় রেখেছেন মানে, ফিরমিনো এবং সালাহ। গত মৌসুমে অ্যান্ড্রু রবার্টসনও নিয়মিত সুযোগ পাননি দলে। তাও ভঙ্গুর রক্ষণ নিয়ে ক্লপবাহিনী চ্যাম্পিয়নস লিগে করেছিলেন বাজিমাত। যদিও ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় অলরেডদের।সর্বোপরি, তাদের পরিবর্তন এসেছে চতুর্দিক থেকেই। সেজন্যই বদলে যাওয়া লিভারপুল হয়তো এবার তাদের শিরোপা-আক্ষেপ ঘুচাতে বদ্ধ পরিকর।
লা লিগা : আলাভেজ
একটা ক্লাবের উন্নতি বা অবনতির অবস্থা কত দ্রুত পরিবর্তন হয়, তা আলাভেজ ও ভ্যালেন্সিয়ার এই মৌসুম এবং বিগত মৌসুমের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। অপরাজিত থাকার দৌড়ে গত মৌসুমে বার্সেলোনার পেছনে লেগেছিলো ভ্যালেন্সিয়া। কিন্তু চলতি মৌসুমে সেই ভ্যালেন্সিয়া টেবিলের তলানিতে ধুঁকছে। ১৬ ম্যাচে জিতেছে মাত্র ৩টিতে, আর ড্র করেছে ১০ ম্যাচে। অন্যদিকে, গতবার রেলিগেশন অঞ্চলে ঘোরাফেরা করা আলাভেজ আছে তালিকার ৬ নম্বরে, যদিও পঞ্চম স্থানে থাকা রিয়াল বেটিস এবং তাদের পয়েন্ট একই।

আলাভেজ ১৯৩১ সালের পর প্রথমবারের মত হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের মতো পরাশক্তিকে; Image Credit: Quality Sport Images/Getty Images
সিরি আ : আটালান্টা
সিরি-আ'তে যদি গোলের হিসাব ধরা হয়, তাহলে মধ্যমসারির মধ্যে জেনোয়া সব থেকে এগিয়ে থাকবে। তাদের নতুন সাইনিং ক্রিস্তফ পিয়ানতেক সিরি-আ'তে এখন পর্যন্ত করেছেন সর্বোচ্চ গোল। কিন্তু সবার চোখের আড়ালে দলগত পারফরম্যান্সের জন্য ঠিকই তাদের স্থান ধরে রেখেছে আটালান্টা।

আটালান্টার স্ট্রাইকার দুভান জাপাতা ©Jean Catuffe/Getty Images
বুন্দেসলিগা : বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
সম্পূর্ণ মৌসুম শেষ করার পর গত বছর বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সংগ্রহ ছিলো মাত্র ৫৫ পয়েন্ট। আর বর্তমানে ১৬ ম্যাচ খেলেই তারা অর্জন করেছে ৩৯ পয়েন্ট। পার্থক্য নিশ্চয়ই ধরা যাচ্ছে?
ইর্য়ুগেন ক্লপ সিগনাল ইদুনা পার্ক ছেড়ে যাবার পর বরুশিয়া ডর্টমুন্ড পড়েছিলো অথৈই পাথারে। একের পর কোচ পরিবর্তনের পরও তাদের সুসময় ফিরছিলো না। কয়েক দফা কোচ পরিবর্তনের পর অবশেষে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ফিরে পাচ্ছে হারানো ঐতিহ্য। বায়ার্ন মিউনিখের থেকে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে লিগে একচ্ছত্র আধিপত্য তারই নমুনা।

বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের পরিবর্তনের মূল নায়ক কোচ লুইসিয়ান ফাভরে; Image Credit: Alexandre Simoes/Borussia Dortmund/Getty Images
তবে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেই যে তারা লিগ জিতে যাবে, এমন কিন্তু নয়। কারণ বায়ার্ন মিউনিখও ফিরে পাচ্ছে তাদের হারানো ফর্ম। তাই এগিয়ে থাকাই মুখ্য নয়, বুন্দেসলিগার নাটকীয়তা এখনও যে অনেক বাকি!
লিগ ওয়ান : লিঁল
মার্সেলো বিয়েলসাকে লিঁল কোচ হিসেবে নিয়ে এসেছিলো বড় ধরণের আশা নিয়ে। কারণ বিয়েলসা এমন ছোট দলকে নিয়ে দারুণ ফুটবল উপহার দিতে পারেন। কিন্তু বিয়েলসা হতাশা ছাড়া আর কিছু উপহার দিতে পারেননি।
ভাগ্য যদি সহায়তা না করতো, তাহলে ফরাসি লিগ ওয়ান বিভাগে এই মৌসুম খেলা হতো না লিঁলের। কারণ রেলিগেশন অঞ্চল থেকে মাত্র এক ধাপ উপরে ছিলো তারা। তুলুজ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট বেশি থাকায় অবনমনের লজ্জাটা অল্পের জন্য পেতে হয়নি তাদের। অথচ তারাই কিনা এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে! অপরাজিত পিএসজি থেকে যদিও তাদের পয়েন্ট ব্যবধান অনেক। কিন্তু গত মৌসুমে যারা ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে কোনোমতে টিকে ছিলো, ১৮ ম্যাচ খেলে তাদেরই পয়েন্ট এখন ৩৪। কী অবিশ্বাস্য এক উত্থানকাব্য!

এ মৌসুমে জ্বলে ওঠা লিঁল স্ট্রাইকার নিকোলাস পেপে© Jean Catuffe/Getty Images
এই পরিবর্তনের পেছনে সব থেকে বড় অবদান রেখেছেন বিয়েলসার পরিবর্তে আসা কোচ ক্রিস্টোভ গারচে। তার অধীনেই জ্বলে উঠেছেন গত মৌসুমের নিষ্প্রভ স্ট্রাইকার নিকোলাস পেপে। জোনাথন বামবাকে ফ্রি ট্রান্সফারে এনেছিলেন তিনিই, সেই বামবা লিঁলের হয়ে ১০ গোল করে ফেলেছেন। কে জানে, হয়তো লিঁল আগামী মৌসুমেই চ্যাম্পিনস লিগে আবিষ্কার করবে নিজেদের। কিন্তু তারা যে উত্থান রূপকথার জন্ম দিয়েছে, তাতে করে বলাই যায়, এ মৌসুমে লিঁলই সর্বাপেক্ষ উন্নতি করা ক্লাব।